নবগাজা

সময়ের বড়ো অকুলান।
মাতৃগর্ভে হেলাখেলা, অপেক্ষা করিস না আর
সন্তান আমার
আয় এইবার –
মাতৃস্নেহ ধৈর্যহীন নয়, তবু
ভয় হয়
যুদ্ধের আগুন লেলিহান
মুছে দেবে
যা হত তোকে আমার দান।

স্বদেশ তো মাটি নয় –
এ তোরই দেশ। মাটি নয়,
জল নয় – সমুদ্রও নয়,
যে অর্ণব অদৃষ্ট জেনে মৃত্যুই বেছেছিল।
মানুষ – তোর আত্মার আত্মীয়
এই দেশ তোর
চিনে নে রে। কিছু মুখ রাখ চিনে
বোমাবর্ষণে ছিন্ন আর হত।
আমিও কুড়িয়ে নেব টুকরো শরীর যত
তাও জেনে রাখ – যারা গত
মনোরম ছিল তারা আর
নিষ্পাপ।
তাদেরও শিশু ছিল – তোরই সমান –
এখন সে পলাতক।
শববাহী শৈত থেকে পলাতক তারা
অনাথ, পিতৃ আর মাতৃহারা।

বিলম্বে অপ্রত্যয় জন্মাতে তো পারে
হয়তো হবি তুই মাতৃ অবিশ্বাসী
ভেবে নিবি কেউই নেই – জনশূন্য দেশ –
নেই কেউ – থাকবে না – ছিল না কখনও –
আছি – ছিন্নমূল দ্বিজ মোরা – অবশেষে বিদ্রোহী –
দৈবদ্রোহী –
সত্তর আরও পাঁচে দুর্ভাগ্য জমাট
নিরাশা ধূসর মসি।

তোর নরম কাঁধে ভারী বোঝা
বড়ো ওজনদার
ক্ষমা কর,
হরিণীর মত শাবক প্রসব করে পালাব তখনই
ভয় হয়
হায়নারা গর্তের ওপারে –
টুঁটি দেখে লাফ দেবে।
আয় ছেলে, পালা রে এখনই
যত দূর যাওয়া যায়
যা, যা, সোনা –
অনুশোচনা
আমাকে আঁকড়ে না ধরে।

কাল রাতের শোকে আমি ক্লান্ত।
তার সঙ্গে কেন লেনদেন?
শিশু ওরে – হাওয়ার সন্তান
ঝঞ্ঝার সঙ্গে কেন করিস বিবাদ?
বলেছি যে, থাক শান্ত।
আমি আজ ফিরেছি আবার
হাতে নিয়ে জরুরি সংবাদ – তাজা
ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল বিনষ্ট বোমায় – গাজা।
পাঁচশ’ মৃতের মাঝে এক শিশু
খুঁজেছিল সহোদর – পেয়েছিল।
খুলির অর্ধেক আছে – বাকি নেই – দৃষ্টি সরল
“ভাই, ভাই, দেখ তো আমাকে!”
দেখেনি সে।
পৃথিবীও তাই –
ঘণ্টা দুই অভিযোগ – মৌখিক গরল
তারপর নিশ্চিন্ত ঘুমের কোলে ঢলে
গেল ছেলেটাকে ভুলে –
আর তার দৃষ্টিহারা ভাই – বিস্মৃতিটা তো চাই।

কী কথা বলি, কেমন করে!
ধ্বংস আর বিপর্যয় –
সহোদরা ভগিনী দু’জন
ক্ষুধার্ত ক্রোধান্বিত
করে আমাকে আক্রমণ – ততক্ষণ
আমার কম্পিত ওষ্ঠে যতক্ষণ
শবের প্রতিটি সমার্থ রক্তের ফোঁটার মত ঝরে –
কবিত্বে আস্থা কী যুদ্ধকালে
কাছিমের চেয়ে ধীর –
প্রতিযোগী ধ্বংসরাশি শশকের তেজে ছুটে চলে।
কাছিম যে সন্তর্পণ
শশক লাফিয়ে চলে হত্যা থেকে হত্যাকাণ্ডে –
পুরাতনী গির্জা – বোমাধ্বংস, সে কি
ঈশ্বরের দৃষ্টিগত?
মসজিদ ধূলিসাৎ, দেবতার কারুণ্যের অংশ?
কই সে রক্ষক পিতা? স্বর্গের অধীশ্বর
এখন কি এরোপ্লেনে? সঙ্গীহীন, একাকী
অথবা বোমাবর্ষণকারী ভক্ষকের সহচর।
সন্তান আমার –
ক্রুশবিদ্ধ ভক্তদের আস্থান অপার।
ঈশ্বর তো সর্বজ্ঞানী
শুধু ভ্রূণরাই অচেতন – এই জেনো সার।


Bangla translation by Shamita Das Dasgupta